ইছামতীর প্রেমে
বিজয় কুমার দাস
নৌকাটা দুলছিল
দুলছিল কচুরিপানার দল।
সেই সঙ্গে দুলছিল
সূর্যের রক্তিম অস্তরাগের অস্পষ্ট
আলোয়
হলদেটে পাহাড় ছাপা আকাশের
প্রতিবিম্ব;
আর ওপারের গাছগুলোর
কালচে ছায়া তোমার বুকে।
মৃদুমন্দ হওয়া আল্পনা আঁকছিল
তোমার শরীর জুড়ে।
দাঁড় টানতে টানতে হাড়ভাঙা
চেহারার মাঝি ছিল উদাসীন।
দৃষ্টিতে এক নিত্যনৈমিত্তিকতার ছাপ
.........।
স্মৃতির ঝুলিতে আছে রূপের রূপকথা।
মন দুলছিল ভাটিয়ালী তাল-লয়-ছন্দে।
সুরারোপ করছিল ঝিঁঝিঁর ঐক্যতান।
জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দে মাদলের বোল।
ঘাসের বনে ফড়িং যুগল ছিল
ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ।
জলের দোলায় দুলছিল ঘাসের দেহ।
কম্পিত হচ্ছিল
ঘাসের অবয়ব-প্রতিচ্ছবি শিহরণে।
সোনালী রঙের পোকাটা
আছাড় খেয়ে পড়লো
কচুরিপানার বুকে।
হয়তো তার পরাগের তীব্র আকর্ষণে।
পিপীলিকাগুলির মুখে
লার্ভা নিয়ে মিছিল।
কোথা হতে গিরগিটিটা তাদের
সর্পিল মিছিলের গতি ব্যাহত করে।
জল-মাকড়শাটা সরে যায়
তরণীর আন্দোলনে।
নদীর বক্ষে বাঁশের খোঁচায়
ক্ষত-বিক্ষত ভগ্ন হৃদয়ের আকুতি।
কোনটাতে লেপ্টে আছে জাল
কোনটাতে নৌকা।
ওপারের ঐ দূরের এক নৌকায়
যাত্রীদের অবরোহণ পর্ব।
মন্থর পায়ে হেঁটে গিয়ে
মিশে যায় আবছায়ার বাঁকে।
জালটা দুলে উঠল,
সঙ্গে বাঁশের ফ্রেমও
মাছের লেজের ঝাপটায়।
কোথা থেকে মাছরাঙাটা ঝুপ করে
জলে পড়ে মাছটার টুঁটি টিপে ধরল।
নাম না জানা পাখিটা
গাছের আড়াল থেকে
ডেকে ডেকে উঠছে।
ডেকে উঠল ঐ পারের যাত্রী -
“পরের ট্রিপ আর করবেন নাকি?”
বহুদূরের এপার-ওপার বন্ধনের
কাঠের সেতুটা দৃষ্টিপটে ধোঁয়াশা।
স্রোতহীনপ্রায় ইছামতী ............
মরুপথে দিশেহারা উদ্ভ্রান্ত
পথিকের উন্মাদনা নেই,
চলে নিজের খেয়ালে
ভবিতব্য বাস্তবতার পথে।
দাঁড়ের খোঁচায় নৌকার ঘূর্ণন
প্রতীক্ষা শুধু ওপারের ভূমির চুম্বন।
(বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগণা –
২০/০৭/২০০৩)
No comments:
Post a Comment