নেই’দের জন্য
বিজয় কুমার দাস
শিয়ালদহ – ডানকুনি লোকাল
একদল বৃহন্নলার হঠাৎ আবির্ভাব
স্টেশনটা ঠিক মনে নেই,
বালি হবে মনে হয়।
আমি তখন আঠারো কি ঊনিশ।
একজন হিজড়ে আমাদের কামরায় এসে
কিছু সাহায্য চাইছিল
সেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে হাততালি দিতে দিতে।
কেউ কোনো কথা বলে না
জানালার দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে,
এক সহযাত্রী, বয়স সাতাশ কি আঠাশ।
তার জঙ্ঘাতে হাত রেখে বলল “কিছু দাও না গো ভাই”।
আমি সেই প্রথম হিজড়ে দেখছি ...
কিছুটা কৌতূহল যে ছিল না তা নয়।
আমার দৃষ্টি ছিল তার চোখের দিকে
তার চেহারার দিকে
তার লোম কামানো হাত ও পায়ের দিকে।
সহযাত্রীটি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে এড়িয়ে গেল।
তারপর এল আমার কাছে
আমার জঙ্ঘায় হাত রেখে বলল—
“দে কিছু, দশ- বিশ- পঞ্চাশ”।
আমি তখন ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র
হাতে যে দশ টাকা দেবার মতো নেই তা নয়।
কিন্তু কেউ কিছু দিচ্ছেনা দেখে
পকেটে হাত দিতে গিয়েও দিলাম না।
ভাবলাম কেউ যদি কিছু ভাবে।
কি ভাববে তাও আমার জানা ছিল না।
যে যা ভাবে ভাবে ভাবুক এটাও ভাবতে পারলাম না।
কেউ কিছু না দেওয়াতে সে রাগান্বিত হল।
তারপর এল এক বাক্যবাণ—
“এই বাবু তোমার সেক্সটা আমাকে দেবে?”
কথাটার পুনরাবৃত্তি ঘটল কয়েক বার।
এই কথার মানে আমার কাছে দুর্বোধ্য ঠিকলো,
‘সেক্স’টা বলতে কি বোঝাতে চাইল তাও দুর্বোধ্য।
ভেবে উঠতে পারলাম না কি বলি বা কি করি।
কেমন একটা লজ্জা- ভয় না কি জানি কি আমাকে বাক্রূদ্ধ করল।
কোনো কথা বেরুল না মুখ দিয়ে।
আমাদের গ্রামে কোনো দিন হিজড়ে আসে নি।
ছোটবেলায় দিদার কাছে শুনেছিলাম
“হিজড়েরা মেয়েদের মতো,
বাচ্চা জন্মালে এরা ঢোলক বাজাতে আসে আর হাততালি দেয়
কিন্তু তাদের, মেয়েদের মতো গোপনাঙ্গ নেই”।
ঐ কথার অর্থও তখন ঠিক বুঝতে পারিনি।
সেক্স এর অনুভূতি সেটাও স্পষ্ট ছিল না।
তবে এখন ভাবি —
অন্যরকম ভাবি।
যখন স্ত্রীর সাথে মিলনের পর পরম পুলকিত হই এবং
একটা পরমতৃপ্তির রেস বয়ে যায় তখন
স্ত্রীকে বাহুপাশে আবদ্ধ করে একটা ক্ষীণ দীর্ঘশ্বাস
পড়ে......
সত্যিই যদি ‘সেক্স’টা ধার দেওয়া যেত তাদের।
---------------------
© Bijoy Kr Das. All Rights Reserved.
Unauthorized use or reproduction for any reason is prohibited.
No comments:
Post a Comment