Sunday, October 13, 2013

অন্য মহিষাসুরের গল্প

অন্য মহিষাসুরের গল্প
বিজয় কুমার দাস
আমার বেটা-বিটি দুটোর ঘুমন্ত মুখের পানে
রোজই তাকাই রাতের বেলা,
তারা আমাকে মোটেই চিনে না,
কোনোদিন দেখেনাই তো !
আমি বাথান থেকে ঘোষদের মোষগুলো নিয়ে
একপ্রহর রাত থাকতে বেরিয়ে যাই
জঙ্গলে, ফিরে আসি তা প্রায় একপ্রহর রাত হলে।
ওদের মাঝে মহিষাসুর মনে হয় নিজেকে।

সঙ্গী একটা নাদনবাড়ি, লুঙ্গি-গামছা,
আর বউটা একটা কৌটোয় নুন-পান্তা পুরে
গামছাটায় বেঁধে দেয়।

আমার লুঙ্গিটা এখনো ক’টা মাস পেরিয়ে যাবেক,
বউটার একটা কাপড় আছে, হয়ে যাবেক,
বেটা-বিটি দুটোকে পুজোতে কিছু না দিলেও
কিছু বলবেক নাই।
বাবুরও তো দুটো ছেলেমেয়ে আছে;
ওদেরগুলো দিয়েচে,
ওগুলো নতুনের মতনই আছে।

কাল রাতে বউটা বলছিলেক মহাষ্টমী বটে
আজও মোষগুলো নিয়ে জলে ভিজতে ভিজতে গোঠে এলুম।
শ’দেড় আছে মনে হয় -- ওসব বাবু-ই জানে ......
আমি তো কর গুনতে জানি না –
তবে জানি প্রত্যেকটাকে আলাদা আলাদা করে।
কোনটা সদাই হাসিখুশী
কোনটা খুব গম্ভীর
কোনটা উদাস প্রকৃতির।
এই যেটা মুখ ডুবিয়ে ঘাস খাচ্ছে
সেদিন কি কান্না, আমি স্পষ্ট দেখেছিলুম।
আমার চোখের সামনেই ওর বাচ্চাটা
পা গুলো টান টান করে কুঁকড়ে উঠল,
পড়ে ছিল তো ছিলই স্থির চোখে
উপরের দিকে চেয়ে।
তারপর ফেলে দিয়ে এলুম ভাগাড়ে;
শুকনিগুলো সাবাড় করে দিয়েছে হয়তো।
কয়েকদিন কিচ্ছুটি মুখে তুলে নাই।

আজ আবার দেখো মুখ ডুবিয়ে খাচ্ছে,
দেখে কি যে আনন্দ হয় !
আসলে আমি এমনভাবেই
সব্বাইকে দেখতে চাই। 



© Bijoy Kr Das. All Rights Reserved.
Unauthorized use or reproduction for any reason is prohibited.

No comments:

Post a Comment